সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
অক্টোবর / ১৬ / ২০২২
মাদার ফিসারিজ রামসার সাইট ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাংগুয়ার হাওর। এই হাওরকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা(বছরের ছয় মাস বর্ষা ও বাকী ছয় মাস শুষ্ক মৌসুমে দুটি ভাগে)নির্বাহ করলেও অসচেতনা ও সঠিক ভাবে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে টাঙ্গুয়াকে পর্যটন নাম দিয়ে দিন দিন ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন উপজেলাবাসী।
এদিকে,চলতি বছরের গত ১৬ই জুন থেকে পর্যটক আগমন ও নৌযানে পর্যটকদের পরিবহন করা নিষিদ্ধ থাকলেও গত ৩ আগষ্ঠ থেকে সর্ত ও রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে শতাধিক নৌযান পর্যটন পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।
পরিবেশ ও কৃষি নিয়ে কাজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন,টাঙ্গুয়ায় পর্যটক গিয়ে পয়ঃনিস্কাশন করাসহ চিপস খেয়ে প্যাকেট,পানির বোতল,কাগজের প্যাকেট,প্লাস্টিক তালা,বর্জ্যসহ অনেক অপচনশীল দ্রব্য আনন্দ যোগে ফেলছে হাওরে। উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে পরিবেশ দুষনে মেতে উঠছে। এতে করে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধংশে মেতে উঠেছে আর এর প্রভাব পড়বে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদেও। তখন কৃষকের চরম ক্ষতির শিকার হবে। এছাড়াও হাওরে মাছের অভাব দেখা দিবে। বোরো আবাদেও এর বিরুপ প্রভাব পরবে।
জানাযায়,টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলায় তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান হিসাবে পরিচয়, প্রথমটি সুন্দরবন। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। কান্দাভর্তি সারি সারি হিজল,করচ আর নলখাগড়ার বন,জলচর পাখি,মাছ,গাছ আর পাখি।
তবে এসব সোনালি অতীতে পরিণত হয়েছে। তবে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় এবিশাল জলাভূমি টাংগুয়ার হাওরের পাশে ৮৮ গ্রাম রয়েছে ৬০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে সরকার। এরপরই হাওরে দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির অবসান হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালের ১২ জানুয়ারি হাওর এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসন হাওরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২৪ জন আনসার এ হাওরের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত ‘কমিউনিটি গার্ড’। গত কয়েক বছর ধরে
ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব নেই আছে কিছু আনসার সদস্য এখন হাওরে।
উপজেলার সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন,হাওর ত হাওর থাকবে,পর্যটনকেন্দ্র বানাতে হবে কেন ? পর্যটকদের কাছ থেকে নৌযান ভ্রমণের পাওয়া টাকার চেয়ে হাওরের ধান,মাছ আর পানি অনেক মুল্যবান। টাঙ্গুয়াকে পর্যটন নাম দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে প্রশাসনের গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন। সময় থাকতে এসব বন্ধ করতে হবে আর প্রমোট করা পাবলিক যারা রয়েছে তারাও একটু বুঝার চেষ্টা করতে হবে টাকা উপার্জনেই শেষ না। জীবন জীবিকার অবলম্বন ধান,মাছ ও পানি আগে রক্ষা করতে হবে। না হলে বেচেঁ থাকায় দায় হয়ে পরবে।
জহির মিয়া,আশিক মিয়াসহ টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন,হাওর পর্যটনের নামে দিন দিন ধংশের দিকে যাচ্ছে টাংগুয়ার হাওর। যে হারে নৌকা,মিনি জাহাজসহ নানান আধুনিক নৌকা হাওরে নামানো হচ্ছে আর রাত বিলাসের জন্য যে আয়োজন তাতে শিগগিরই হাওর বিনষ্ট হবে। বর্ষায় নৌযান দিয়ে চলাচলের কারনে আমাদের ঘর বাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাওর না বাচঁলে আমরা কেউই বাচঁতে পারব না। কারন হাওরে মাছ,ধান উৎপাদন হয়। টাকা হলেই ত এ গুলো পাওয়া যাবে না।
টাংগুয়ার হাওরে পাড়ের জেলে আমিনুল মিয়াসহ অনেকেই জানান, কয়েক বছর আগেও টাংগুয়ার হাওরের আশপাশে মাছ পেতাম এখন পাই না। এমনকি টাংগুয়ার হাওরে মাছ পাই না। এর কারন হিসাবে তারা এই অপরিকল্পিত নৌযান চলাচল ও আগত পর্যটকদের কার্যক্রমকেই দায়ী করছেন। সুনামগঞ্জের একটি প্রবাদ আছে মৎস্য পাথর ধান সুনামগঞ্জের প্রান কথাটি এখন বিলুপ্তির পথে। দিন দিন আমরা বেকার হয়ে পরছি।
কৃষক শফিক মিয়াসহ অনেকেই বলেন,পাষ্টিক,কাগজের টৌংগা,পলিথিনসহ নানান বজ্য পানিতে ফেলায় তা নিচে জমিতে গিয়ে জমা হয়। দীর্ঘ দিন থাকায় জমির মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। ফসল উৎপাদনের কমে যায়। এছাড়াও প্রতি বছর হাওরের পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে এই গুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে আমাদের অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়। হাওর হাওরেই থাকুক পর্যটনের নাম দিয়ে ধংস করার কি প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান,পর্যটক ও পর্যটকবাহী নৌজানকে হাওর ও হাওরের পরিবেশ রক্ষায় কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে কেউই যেন হাওরের পরিবেশ ধংশ করতে না পারে। আগেও নির্দেশনা অমান্য করায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলেই আইনানুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।