সৈয়দপুর পৌর আধুনিক সবজি
বাজারের দোকান বরাদ্দ প্রদানে নতুন টেন্ডার দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও
সমাবেশ করেছে দোকানদাররা। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ২ টায় এই কর্মসূচী
পালন করে। বাজারে পূর্ব থেকে ব্যবসাকারীদের বাদ দিয়ে অন্যদের বরাদ্দ দেয়ার
ষড়যন্ত্র হিসেবে এই টেন্ডার অভিযোগে তা বাতিলের দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানা
যায়, বিগত ২০০৮ সালে তৎকালীন পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল এই মার্কেটটি
প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে নিয়ম মাফিক বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘ
প্রায় দেড়যুগ ধরে ব্যবসা করে আসছে বর্তমান দোকানদাররা। নিয়মিত পৌরসভার
পাওনাদিও পরিশোধ করেছেন প্রতিটা ব্যবসায়ী।
এখন
সেই দোকান নতুন করে বরাদ্দ নেয়ার জন্য টেন্ডার দিয়েছে বর্তমান মেয়র রাফিকা
আখতার জাহান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে দোকানদাররা। কারণ দোকান প্রতি দেড় থেকে
দুই লাখ করে টাকা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা টেন্ডার বাতিল
পূর্বক দাবীতে ওই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে।
বাজার
থেকে মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু চত্বরে প্রতিবাদ
সভা করে। এতে বক্তব্য বলেন সবজি দোকানদার সমিতির উপদেষ্টা আসলাম, সভাপতি
জয়নুল আবেদীন, সেক্রেটারি মাসুদ শেখ, সহ-সেক্রেটারী হামিদুল, গোশত ব্যবসায়ী
সমিতির সভাপতি নাদিম আকতার ছটু ও মাছ ব্যবসায়ী সাজিদ প্রমুখ।
জয়নুল
আবেদীন বলেন, মৃত আখতার হোসেন বাদলের স্ত্রী ও বর্তমান পৌর মেয়র রাফিকা
আখতার জাহান তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী স্বামীর স্মৃতি এই বাজার
উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। গত মে মাসে বাজারটি সংস্কার করা হয়। এরপর থেকে চাপ
সৃষ্টি করা হয় নতুন করে দোকান বরাদ্দ নেয়ার জন্য।
মাসুদ
শেখ বলেন, দোকান প্রতি ভাড়াও বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করতে চায় পৌর পরিষদ।
আমাদের মত দরিদ্র ও ক্ষুদ্র দোকানদারদের পক্ষে এত ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করা
কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে যেই দোকানে আছেন তাকে
সেখানেই ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে।
হামিদুল
ইসলাম বলেন, আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আখতার হোসেন বাদল যে ৫৫ টি
দোকান বরাদ্দ দিয়েছিলেন তা এবং ডোনেটকৃত ৭ টি বাদ দিয়ে নতুন ৫০ টি
টেন্ডারের মাধ্যমে দেয়া হবে। এজন্য পুরাতন দোকানদাররা তাদের জামানত বাবদ ২৩
লাখ ৯০ হাজার টাকা দিতেও সম্মত হয়।
কিন্তু
তারপরও গত ৬ ডিসেম্বর পত্রিকায় দোকান বরাদ্দের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
করা হয়েছে। এটা চরম অন্যায়। কুচক্রীদের পরামর্শে নতুন টেন্ডারের নামে বিপুল
অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়ার জন্য ফন্দি করা হয়েছে। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া
হবেনা। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।
নাদিম
আকতার বলেন, এই দোকানই আমাদের জীবন জীবিকা। নতুন টেন্ডারে অত টাকা জামানত ও
ভাড়ায় আমরা কেউ দোকান নিতে পারবোনা। ফলে আয়ের একমাত্র উৎস্য হারিয়ে পথে
বসলে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ না খেয়ে মরার উপক্রম হবে। তাই জীবন দিয়ে হলেও
এমন অমানবিক কার্যক্রম প্রতিহত করবো। পৌর পরিষদ আমাদের উপর অবিচার করছেন।
সাজিদ
বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে মানুষের মাথা গোজার ঠাই ও
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। সেখানে পৌর মেয়র দোকান কেড়ে নিচ্ছেন। এমনকি
তাঁর স্বামীর দেয়া বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানদারদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নিজের
আখের গোছানোর অপচেষ্টা করছেন। গরীবের পেটে লাথি মারলে আল্লাহও সইবেনা। এত
লোভ ভালোনা।
আসলাম
বলেন, শতাধিক দোকানদারের ন্যায্য দাবীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে
অনতিবিলম্বে টেন্ডার বাতিল করে আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন।
নয়তো আমও যাবে ছালাও যাবে বলে পৌর মেয়রের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন এবং
দাবী মেনে না নেয়া পর্যন্ত বাজারের সকল সবজি, মাছ, মাংস, মুরগী ও মুূদি
দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
এব্যাপারে
পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, পৌরসভার আয়ের উৎস্য হাট বাজার। তাছাড়া
বাজারের শেড ও রাস্তা সংস্কার করে দেয়া হয়েছে। আজীবনতো আর একইভাবে চলতে
পারেনা। তাই সময়ের প্রয়োজনেই ভাড়া ও জামানত বৃদ্ধি করা হয়েছে। দোকানদাররা
আলোচনায় সম্মত না হওয়ায় নিয়ম মাফিক নতুন করে দোকান বরাদ্দ নেয়ার জন্য আহবান
করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরাতন ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।