মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি
অক্টোবর / ১৯ / ২০২২
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনে আসক্ত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র তীব্র ভাবে মাদকাসক্ত হয়। এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য।
শুধু এই বিদ্যালয় নয় উপজেলার বেশির ভাগ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজের ছাত্রসহ তরুণ ও যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছে ।
জানা যায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা থাকায় খুব সহজেই মাদক কারবারীরা বিভিন্ন ধরনের মাদক সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইয়াবা ও গাঁজা সবচেয়ে বেশি বিক্রি করা হয়। ১৫ থেকে ২৫ বছরের বয়সীরা কিশোর ও যুবকরা সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি স্কুল, কলেজের ছাত্রের নাম রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাদকে আক্রান্ত হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পরিবারের লোকজন এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখছে না। লোকলজ্জার ভয়ে তারা এগুলো গোপন রাখছেন।
শুধু বিদ্যালয় নয় রাতের অন্ধকারে উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকার বিদ্যালয় মাঠে মাদক সেবন ও কেনাবেচা করা হয় এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে দল বেঁধে মাদক সেবন করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে জানা যায়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের থেকে জানা যায়, তাদের রোগীদের তালিকায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের নাম সবচেয়ে বেশি। এসব মাদকাসক্ত বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েরা ভালো পরিবারের সন্তান। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে এর বিস্তার দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। বিশেষ করে অভিভাবকরা নিজের সন্তানকে ঠিকমতো গাইড না দেওয়ার কারণে মাদকাসক্ত হচ্ছে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
মাদকাসক্ত কয়েকজন স্কুলছাত্রের অভিভাবক বলেন, আমাদের অজান্তেই আস্তে আস্তে মাদক সেবনে আসক্ত হয় আমাদের ছেলেরা। কোন ভাবেই ফিরিয়ে আনতে পারছিনা। বাধ্য হয়ে আত্মীয়র বাড়িতে তাদের দিয়েছি। প্রশাসনের নিরবতার কারণে মাদক কারবারীরা প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল শিক্ষার্থীরা দিন দিন মাদকের দিকে ধাবিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, কম-বেশি সব বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থীরা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব মাদক সম্পর্কে সচেতন করা হয়। কিন্তু পারিবারিক ভাবে তাদেরকে কোন শাসন করা হয়না। যারা মাদক সেবন করে এরা খুব কম বিদ্যালয়ে আসে। পরিবারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা তা বিশ্বাস করাতে চায়না। সন্ধ্যার পর গ্রামের বাজারগুলোতে অহরহ বিক্রি করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য।
কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বলেন, ‘কিছু দিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখানে মূল পরীক্ষার কেন্দ্র। সাতটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে এসে পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষার শুরু থেকে মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও চিতলীয়া জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা দোকানে এসে প্রতিদিন সিগারেট চাইতো। নাই বললে জিজ্ঞেস করতো কোথায় পাওয়া যাবে? থানার সামনে গেলে পাবে এই কথা বলে বিদায় করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদের জিজ্ঞেস করতাম তোমরা সিগারেট কেন খাচ্ছো? তখন তারা বলতো আমাদের বাবার টাকা সিগারেট খাচ্ছি আপনার সমস্যা কি? এভাবে উত্তর দিয়ে ছাত্ররা চলে যেত।’
এ বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের উপপরিচালক মো. হাবীব তৌহিদ ইমাম বলেন, ‘স্কুলের কি পরিমাণ ছাত্ররা মাদকাসক্ত হচ্ছে এর কোন নিদিষ্ট তথ্য নেই। আমাদের কাছে মাদকের তথ্য এলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন স্কুল পর্যায়ে করা হবে।’